পদ্মা নদীর কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের সুন্দরতম শহরগুলোর অন্যতম, শিক্ষানগরী হিসেবে খ্যাত, সিল্ক সিটি হিসেবেও সুপরিচিত, পরিচ্ছন্ন এবং সবুজে ঘেরা রাজশাহী। রাজশাহীর আম এর সুখ্যাতি পৃথিবীব্যাপী। ব্রিটিশ রাজত্বের সময়ে রাজশাহী বোয়ালিয়া নামে পরিচিত ছিল। তখন এটি ছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম অঞ্চলের অর্ন্তগত রাজশাহী জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র।
রেশম নগরী বা শিক্ষানগরী বা আমের শহর ছাপিয়ে রাজশাহী একটি পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ নগরী হিসেবে দেশে বিদেশে সুখ্যাতি পেয়েছে। আর তাই বসবাসের জন্য রাজশাহী হয়ে উঠেছে দেশের মানুষের কাছে লোভনীয় একটি স্থান।
সুস্থ্য এবং নির্মল জীবন যাপনের জন্য যা যা প্রয়োজন তার অধিকাংশ জিনিসই রাজশাহীতে উপস্থিত। ধীরস্থীর শান্ত জীবনের পাশাপাশি বসবাসে জটিলতা এবং অস্থিরতা বিহীন নির্মল পরিবেশ এ শহরের প্রধান আকর্ষন।
শান্তিপূর্ন ভাবে বসবাস বা সন্তানকে সুসন্তান এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সমস্ত উপকরন রাজশাহীতে বিদ্যমান।
অর্থনৈতিক জীবনঃ
বেঁচে থাকতে হলে অর্থের প্রয়োজন। এটি সত্য যে রাজশাহীতে বড় কোনো শিল্প কলকারখানা নেই। তবে কৃষি ছাড়াও শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা এবং তথ্য-প্রযুক্তি থেকে আয়ের অবাধ সুযোগ রয়েছে এ শহরে। বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গা থেকে জীবন-যাপন খরচ তুলনামুলক কম বলে জীবনে অর্থনৈতিক জটিলতা অনেক কম।
বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে গতিশীল করতে পদ্মা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ হয়ে রাজশাহী হয়ে আরিচা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত নৌরুট চালুর কাজের অগ্রগতি হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ধূলিয়ান হতে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত নৌরুট চালু হবে।এটি চালু হলে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। এর মাধ্যমে রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি গতিশীল হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সামাজিক জীবনঃ
রাজশাহী বাংলাদেশের অন্যতম বিভাগীয় শহর হলেও এখানে নগর জীবনের অস্থিরতা অনুপস্থিত। আইন-শৃংখলা অন্যান্য শহরের তুলনায় যথেষ্ট ভালোই বলা যায়। নাগরিক জীবনে ব্যস্ততা ও জটিলতা তুলনামুলক কম বলে পারস্পারিক সৌহার্দ্য বেশি।
শিক্ষাঃ
রাজশাহীকে বলা হয় শিক্ষা নগরী। এবং রাজশাহীর অর্থনীতির একটি বড় অংশ আসে শিক্ষা খাত থেকে। এর অন্যতম কারন এ শহরে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সকল সুযোগ রয়েছে। পুরো শহরটিই একটি শিক্ষা বান্ধব শহর। বেসরকারী-সরকারী অসংখ্য প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়াও কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয় রয়েছে। রয়েছে মেডিকেল কলেজ ও মেডিকেল বিশ্ব-বিদ্যালয়। প্রকৌশল পেশার জন্য জ্ঞানার্জনের জন্য রয়েছে পলিটেকনিক এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
যোগাযোগঃ
রাজশাহীর প্রতিটি সড়ক প্রশস্ত এবং পরিচ্ছন্নের কারনে সকলের কাছে প্রশংসিত। শহরে যাতায়াতের জন্য দূষনমুক্ত বৈদ্যুতিক বাহনের ব্যবহার অনেক বেশি। তাই পরিবেশ দূষন অনেক কম। অটো রিকশায় চড়ে শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা চলে যাওয়া যায় মাত্র ১০টাকা খরচে(২০২৩ সাল)। কমবেশি সকল স্থানে রিকশা-অটোরিকশা রয়েছে। মোটরসাইকেলের ব্যবহার রয়েছে। নিজস্ব গাড়ী থাকলে এ শহরের রাজার হালতে চলাচল করা যায়।
রাজশাহী থেকে কলকাতা ট্রেন সার্ভিস চালু প্রক্রিয়াধীন। শাহমুখদুম বিমানবন্দরটির সম্প্রাসরন কাজ চলমান।
বিনোদনঃ
নির্মল এবং প্রাকৃতিক বিনোদনের জন্য রাজশাহী নিঃসন্দেহে সবার শীর্ষে। প্রায় প্রতিদিন বিকেলে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ বিনোদনের আশায় পদ্মার তীরে ছুটে যায়। রয়েছে চিড়িয়াখানা এবং শিশুপার্ক। রাজশাহীতে বহু রাস্তা রয়েছে যেখানে ভোরে বা বিকেলে হাটাহাটির জন্য খুবই সুবিধাজনক।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কঃ
রাজশাহীতে ৩১ একর জায়গা জুড়ে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক। তরুণদের কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনা এই হাইটেক পার্ক। এতে রয়েছে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ইনকিউবেশন সেন্টার ও জয় সিলিকন টাওয়ার। যেখানে তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এখানে তৈরি হচ্ছে উদ্যোক্তা।
উদ্যোক্তারা তৈরি করছেন আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স প্রোগ্রাম, অ্যাপ ও ভেন্ডিং মেশিনসহ অনেক কিছু। দেশে আনছেন বৈদেশিক মুদ্রা।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
রাজশাহীর আয়তন : ২৪০৭.০১ বর্গকিলোমিটার
সিটি কর্পোরেশন : ১টি
উপজেলা : ৯টি
থানা : ১৩ টি (মেট্রোপলিটন এলাকায় ৪ টি)
ইউনিয়নের সংখ্যা : ৭২ টি
পৌরসভার সংখ্যা : ১৪ টি
মৌজার সংখ্যা : ১,৭১৮ টি
গ্রামের সংখ্যা : ১,৯১৪ টি
শুধুমাত্র শিল্প-কল-কারখানার অনুপস্থিতি ছাড়া নাগরিক সকল সুবিধাসহ রাজশাহী শহর বাংলাদেশের অনন্য একটি শহর। বরং কল-কারখানা না থাকায় শহরটি নির্মল এবং পরিচ্ছন্ন। সুস্থ্য জীবন যাপন, সন্তান লালন-পালন এবং তাদের গড়ে তোলা ও সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে রাজশাহী দেশের সর্বোচ্চ সেরা মানের স্থান। জীবনে স্থীরতা এবং নির্মলতা আনতে রাজশাহী অতুলনীয়। আর তাই বসবাসের জন্য অনায়াসেই রাজশাহী হতে সেরা পছন্দ।
ছবি: সংগৃহিত